এসডিজি অর্জনে সাহসী রোডম্যাপ চাই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করে ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার টেকসই উন্নয়নের ওপর নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি দেওয়া বক্তব্য তিনি বলেন, ‘এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে  ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রোডম্যাপ প্রণয়ন করা প্রয়োজন-যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে।’

আর্থ ইনস্টিটিউট, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক সম্মেলনটির আয়োজন করে।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা রেখেছেন, যাতে এসডিজিএস অর্জন নিশ্চিত করতে যথাযথভাবে বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম প্রস্তাবনায় বলেন, ‘এ বৈশ্বিক মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণের ওপরেই এখন এসডিজির সাফল্য নির্ভর করছে। এখন বিশ্বের সব স্থানে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সময়ের দাবি এবং তা অতি জরুরি।’

দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় বলেন, ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমাদের সম্পদের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে, তা অবশ্যই কমাতে হবে।’

তৃতীয় প্রস্তাবনায় বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারির অভিঘাতের কারণে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তার জন্য আমরা উদ্বিগ্ন। অধিকন্তু আমাদের পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীর ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। 
চতুর্থ প্রস্তাবনায় বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে-কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের বিপর্যয় বা দুর্যোগ মোকাবিলায় জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণকে পূর্ণতা দেবে।’

সর্বশেষ প্রস্তাবনায় বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ জোরদার ও যান্ত্রিক সহায়তার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মহামারি ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রতিটি স্তরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুতি বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। 

২০৩০ এজেন্ডাকে একটি বৈশ্বিক চুক্তি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘এটি সবার অন্তর্ভুক্তিতে আমাদের টেকসই বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি ব্লুপ্রিন্ট। কোনো দেশ একা এ এজেন্ডা অর্জন করতে পারবে না। এ এজেন্ডা অর্জনে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সংহতি বাড়াতে হবে।’

জাতিসংঘের অধিবেশনে অংশগ্রহণ : জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের প্রথম দিন অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনেই ২৪ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন তিনি। 

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন বসেছিল ভার্চুয়ালি। এ বছর সশরীরে সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে মিলিত হলেন বিশ্ব নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে সাংবাদিকদের বলেন, মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ‘মানুষের কথা চিন্তা করে’ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে ঝুঁকি জেনেও প্রধানমন্ত্রী এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) এসেছেন। এসেছেন দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য। এটা সব সময় তার হৃদয়ে রয়েছে।’

জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরদিন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের অংশগ্রহণে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাগানে একটি ‘হানি লোকাস্ট’ গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তরের লনের ইউএন গার্ডেনে সেই গাছটির পাশেই বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে তার বাণী সংবলিত একটি বেঞ্চও উন্মুক্ত করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার গ্রহণ : এদিকে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার নিউইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন এবং তিনি বাংলাদেশের জনগণকে এটি উৎসর্গ করছেন।’ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের পর টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে (এসডিজি) দ্রুত এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে এ পুরস্কার পাওয়াকে দেশের সফলতার গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসাবে অভিহিত করেন মোমেন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন কৌশলবিদ অধ্যাপক জেফ্রি ডি. সচের নেতৃত্বে জাতিসংঘ মহাসচিবের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১২ সালে এসডিএসএন প্রতিষ্ঠা করা হয়। টেকসই উন্নয়নের জন্য বাস্তবভিত্তিক সমাধান জোরদারে বিশ্বের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানোই এ প্ল্যাটফরমের লক্ষ্য। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শেখ হাসিনাকে ‘জুয়েল ইন দি ক্রাউন অব দি ডে’ হিসাবে তুলে ধরেন এবং বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস চলাকালেও এসডিজি প্রচারণা কার্যক্রম চালাতে তার (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘এ পুরস্কার হচ্ছে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে জোরালো দায়িত্ব পালনের একটি প্রমাণপত্র।’

শেখ হাসিনার সঙ্গে বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ : বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটলি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার তার অবস্থানস্থল লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে সাক্ষাৎ করেন মোটলি। বৈঠকে দুই নেতা এন্টি মাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সসহ (এএমআর) নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান।

সাক্ষাৎ পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর আত্মকথা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র কপি বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।