প্রধানমন্ত্রী ‘পাশে আছেন’

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই আসছে আরেকটি ঈদ; লকডাউনে আয় হারানো, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে এবারও আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী রোববার তিনি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। সেজন্য ৯১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর কর্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

দ্বিতীয়বারের মত হাতে নেওয়া এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি পরিবার আড়াই হাজার টাকা করে সহায়তা পাবে সরাসরি। এক্ষেত্রে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিকসহ অপ্রচলিত পেশার নিম্নআয়ের মানুষকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “মহামারীর প্রথম পর্যায়েও প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ৩৬ লাখ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। এবারও সেই সহায়তা তিনি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ যখন আসে, প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন।”

গত ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে কঠোর লকডাউন শুরু হলে সারাদেশের প্রতিটি এলাকাতেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শ্রমজীবী মানুষ ও প্রান্তিক জনপদের মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে।

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ৫৯০ কোটি টাকা মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করেছে। এই কার্যক্রম এখনও চলছে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার ত্রাণ তহবিল থেকে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে আরও ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন। জরুরি কোনো প্রয়োজনে ব্যবহারের পাশপাশি সমাজে যারা ভাসমান, দুঃস্থ, তাদেরকে দ্রততম সময়ে সহায়তা দেওয়ার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছ বলে জানান তিনি।  

এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তার জন্যও প্রধানমন্ত্রী যে ইতোমধ্যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তোফাজ্জল হোসেন।

স্বাস্থ্য বিষয়ক সব ধরনের নির্দেশনা মেনে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার পাশপাশি হাওর এলাকায় ধানকাটা শুরু হওয়ার সাথেসাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদ থেকে যে সমস্ত শ্রমিক ওইসব এলাকায় ধান কাটতে যান, তাদের সেখানে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার নির্দেশও সরকার প্রধান দেন।   

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব বলেন, “ইতোমধ্যে ৮০ ভাগের বেশি ধান হাওর এলাকায় কাটা হয়েছে, যেটা একটা বড় স্বস্তির বিষয়।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, হাওর অঞ্চল, বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা জেলায় হাওরের বোরো ধানা কাটার জন্য শ্রমিক সরবরাহসহ ধান কাটা, ধান মাড়াই কাজ যাতে সময়মত ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে হাওর অঞ্চলসহ সারাদেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ধান কাটা, ধান মাড়াইয়ের কাজে অংশ নিচ্ছেন। 

দরিদ্র, অসহায় মানুষকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার পাশপাশি সমাজের যারা কারো কাছে হাত পাততে পারেন না, কিংবা সহায়তা চাইতে পারেন না, তাদের পাশে থাকার জন্যও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। 

তার কার্যালয়ের সচিব বলেন, “অনেকে হাত পাততে লজ্জা পান, বা সবার সামনে এসে সাহায্য চাইতে অস্বস্তি বোধ করেন। সেজন্য কিন্তু ৩৩৩ নম্বর চালু করা হয়েছে। যারা এই মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বা একটু খারাপ অবস্থায় পড়ে গিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খুবই গোপনে তাদের বাড়িতে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন।”

এছাড়া সারাদেশে শহর এলাকায় নিম্নবিত্ত মানুষের মাঝে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাকের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেঁজুর, পেঁয়াজ সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রী করছে টিসিবি।

তাতে প্রতিদিন আট লাখ মানুষ উপকার পাচ্ছে জানিয়ে তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ২ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে সকল মানবিক সহায়তা কার্যক্রমসহ করোনাভাইরাস মোকাবেলার সার্বিক বিষয় তিনি নিয়মিত তদারকি করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।

চলমান লকডাউনের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত সেসব কাজ তদারক করছেন।

এবার বাংলা নববর্ষের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় তার সরকারের চারটি মূলনীতির কথা তুলে ধরেন।

সেগুলো হল: সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি, এই ব্যয়ের জন্য ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে’ অগ্রাধিকার দেওয়া, আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিকদের কাজে নিযুক্ত রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা দক্ষতা ধরে রাখা, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী, দিনমজুর এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িতদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থ সরবরাহ বাড়ানো।

সরকার এই চার নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এবং প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন বজায় রাখার এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার মোট ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা তুলে ধরে সেই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার সব সময় আপনাদের পাশে রয়েছে।”