বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ :এডিবি

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরুর পরেও বাংলাদেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির হিসাবে চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি শুরু হওয়া করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় এই পুনরুদ্ধারের গতি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। গতকাল বুধবার ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০২১’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ, জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সুন চেন হং বক্তব্য দেন। মনমোহন প্রকাশ বলেন, বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরুর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮-৯ মাসের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রাক্কলন করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিলের শুরুতে লকডাউন দেওয়া হয়। চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এগুলো অবশ্যই প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। এ কারণে আমাদের ধারণা প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে আসতে পারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কীভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া হচ্ছে, তার ওপর। এর পাশাপাশি টিকা কার্যক্রম কেমন চলছে, এটিও অর্থনীতির সামনের দিকে যাওয়ার নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। এডিবির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশেরে প্রবৃদ্ধি আরো বেড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশকে সহায়তার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনমোহন প্রকাশ বলেন, টিকা দেওয়ার মাধ্যমে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। এ জন্য বাংলাদেশকে ৯৪ কোটি ডলার দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার জন্য শুধু সিরাম ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বিকল্প উত্স খোঁজা উচিত। কোরিয়া ও থাইল্যান্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা বানায়। এছাড়া স্পুিনক ও সিনোভ্যাক্স নিয়েও আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, এ মুহূর্তে মূল চ্যালেঞ্জ হলো টিকার সরবরাহ।

কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছর করোনার প্রকোপ শুরুর পর এপ্রিল-জুলাই সময়ে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছিল ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে প্রণোদনার বাস্তবায়ন এবং অর্থনীতি সচল হওয়ার পর এই হার খুব দ্রুত ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসে। অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হলে স্বল্প মেয়াদে দারিদ্র্য এবং বেকারত্বও বেড়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের আয় বাড়াতে হবে। স্বল্প মেয়াদে সাধারণ মানুষের হাতে নগদ সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে। দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে হবে। অর্থ প্রাপ্তির বিষয়গুলো সহজ করতে হবে। বাংলাদেশে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ ব্যয় হয় স্বাস্থ্য খাতে। সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি শ্লথ করে দিতে পারে। সম্প্রতি করোনার ধাক্কা সামলে উঠার কিছু নিদর্শন দেখা যাচ্ছিল। রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানিসহ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছিল। প্রণোদনা বাস্তবায়ন, সরকারি ব্যয়সহ বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে চলতি অর্থবছর ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও প্রত্যাশা করা হয়েছিল। তবে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা কতটা ক্ষতি করবে সেটি এখনই পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দ্রুত প্রণোদনার বাস্তবায়ন করে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে হবে।

এডিবি প্রত্যাশা করছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বেসরকারি ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে এবছর মূল্যস্ফীতির হারও কিছুটা বাড়বে। গতবছর মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ থাকলেও এবছর কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। এডিবির হিসাবে উন্নয়নশীল এশিয়ার দেশগুলোতে এবছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। যা পরের বছর কমে হবে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।