যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ বাহিনীর সদস্য হেফাজত নেতাদের বিচার দাবি

চট্টগ্রামব্যুরো: ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধে জড়িত রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের মতো কওমিপন্থি ‘মুজাহিদ বাহিনী’রও বিচার দাবি করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। একাত্তরের মুজাহিদ বাহিনীর অনেকে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে আছেন অভিযোগ করে দলটির নেতারা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি মুজাহিদ বাহিনীর বিচার হতে হবে। কারও বিচার হবে-ফাঁসি হবে আর একই অপরাধে অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।

বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসকে নিষিদ্ধসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়ার জিরি, ঢাকার বড় কাটরা, ছোট কাটরা, লালবাগসহ বিভিন্ন মাদরাসায় কওমি-ওহাবিপন্থী মুজাহিদ বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। একাত্তর সালের পত্রপত্রিকা ও দলিল-দস্তাবেজে দেখা যাবে, সেসময় জামায়াতপন্থি রাজাকার, আলবদর-আলশামসের মতো মুজাহিদ বাহিনীও সব ধরনের যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করেছিল। একাত্তরের সেই পরাজিত শক্তি মুজাহিদ বাহিনীর নেতারা পরবর্তী সময়ে দেশে হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জামাআতুল মুজাহিদিন (জেএমবি) ছাড়াও বিভিন্ন উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠন তৈরি করে। এসব জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ ও কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার পর ২০১০ সালে তারা হেফাজতে ইসলাম গঠন করে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধে জড়িত মুজাহিদ বাহিনীর বিচার দাবি করে বলা হয়, ‘কারও বিচার হবে আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে, কারও ফাঁসি হবে আর কাউকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হবে, পুর্নবাসন করা হবে— এ ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ন্যায়বিচারের অন্তরায়। এতে অপরাধীরা প্রশ্রয় পেয়ে দেশ-জাতির বিরুদ্ধে মারাত্মক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।’

নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বললেও শুরু থেকেই হেফাজতের কাজকর্ম উগ্র জঙ্গিবাদী ছিল অভিযোগ করে সুন্নীয়তপন্থি এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘হেফাজত প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে তাণ্ডব, ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু বসতি ও মন্দিরে হামলা, ২০১৮ সারের ২৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটের জৈন্তাপুরে মাহফিলকে কেন্দ্র করে তাণ্ডব, সম্প্রতি ২৬ থেকে ২৮ মার্চ নরেন্দ্র মোদিবিরোধী আন্দোলনের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তাণ্ডব ও নাশকতা চালিয়ে জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে।’

‘আমরা সরকারকে বারবার সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের আহ্বান-দাবিতে ভ্রুক্ষেপ না করে বারবার হেফাজতে ইসলামকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। সুতরাং দেশজুড়ে জঙ্গিবাদী তাণ্ডব ও নাশকতার জন্য হেফাজত যতটুকু দায়ী, সরকারও এর দায় এড়াতে পারে না। জঙ্গিবাদীদের প্রতি সরকার কঠোর না হওয়ায় তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সাহস পেয়েছে,’— বলা হয় লিখিত বক্তব্যে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল, যে দলের সঙ্গে যুক্ত মামুনুল হক, সেই খেলাফত মজলিসকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে দলটির নেতারা বলেন, ‘সর্বশেষ সরকারি তদন্তে পাকিস্তানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে হেফাজতের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের শীর্ষ নেতৃত্বের যোগসাজশ থাকার তথ্য উঠে এসেছে। আমাদের দাবি হচ্ছে— জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে খেলাফত মজলিসের নিবন্ধন বাতিলসহ দলটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

নৈতিক পদস্খলন ও জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ডে যুক্ত হেফাজতে ইসলামকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘তাদের কমিটি বিলুপ্তি বা নতুন কমিটি গঠন করার মধ্য দিয়ে তাদের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের অপরাধকে মার্জনা করা যায় না। বরং তারা খোলস পাল্টিয়ে নতুনভাবে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে। অনতিবিলম্বে হেফাজতে ইসলামকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভু্ক্ত করে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

হেফাজতের অর্থের জোগানদাতাদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়ে বলা হয়, ‘সব কওমি জঙ্গি নয়, কিন্তু সব জঙ্গিই কওমি। তাই কওমিদের আর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। হেফাজতি জঙ্গিরা অরাজনৈতিক খোলসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা করে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তাদের অর্থদাতা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ‍মুখোমুখি করতে হবে।’

আলিয়া ও কওমি মাদরাসাগুলোকে একই সিলেবাসের আওতায় এনে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালনার দাবি জানিয়ে বলা হয়, যতদিন পর্যন্ত কওমি মাদরাসাগুলো মূলধারায় সরকারি নিয়ন্ত্রণে আসবে না, ততদিন একের পর এক ভিন্ন নামে, ভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। কওমি মাদরাসাগুলোকে অডিটের আওতায় আনতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এম এ মতিন, বিভিন্ন পদে থাকা এম এ মান্নান, সৈয়দ মছিহুদৌলা, আহমদ হোছাইন আল কাদেরি, শাহ খলিলুর রহমান নিজামী, আবু সুফিয়ান আবেদী, ছাদেকুর রহমান হাশেমী ছিলেন।