শেখ হাসিনার চার দশক, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা

একটি ছবি এক হাজার শব্দের চেয়েও শক্তিশালী, আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দশককে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’কে ছবিতে ছবিতে তথ্যচিত্রে এভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পন্তক্তিতে ছবির গল্পে গল্পে প্রতীয়মান হয়, ‘যাত্রী আমি ওরে, পারবে না কেউ রাখতে আমায় ধরে’।

রোববার (১৬ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন চত্বরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘শেখ হাসিনার চার দশক: বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক তথ্যচিত্রে এটাই প্রতীয়মান হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস সম্পর্কে জানার লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করবেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

আলোচক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আজকের তথ্যচিত্র প্রদর্শনীটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়োজন। কারণ ছবি অনেক কথা বলে। চীন দেশের একটি প্রবাদ আছে, একটি ছবি এক হাজার শব্দেরও চেয়েও শক্তিশালী। আমি বলি এক হাজার নয়, দশ হাজার, পঞ্চাশ হাজার শব্দের চেয়েও শক্তিশালী একটি ছবি। শেখ হাসিনার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি পঙ্কক্তি দিয়ে বলতে চাই, ‘যাত্রী আমি ওরে। পারবে না কেউ রাখতে আমায় ধরে’।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে কেউ ধরে রাখতে পারবে না। সেই জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসকেরা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সামরিক শাসকেরা, কেউ কিন্তু ধরে রাখতে পারেনি। আমরা যত ষড়যন্ত্র দেখেছি, যতবার তার জীবনের উপর আক্রমণ হয়েছে, সেগুলোকে উপেক্ষা করে, কোনো গুরুত্ব না দিয়ে তিনি কিন্তু তার সাহস প্রজ্ঞা এবং দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। এটি এখন বাংলাদেশের মানুষকে সার্বিক মুক্তির সন্ধান দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু আজীবন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন এবং স্বপ্ন সফল করে গেছেন।

আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেন। আজকে যে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি রোল মডেল হিসাবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তার মূল কারণ শেখ হাসিনা— তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তার শতায়ু কামনা করে তিনি বলেন, তিনি আরও দীর্ঘদিন দেশের মানুষকে সার্বিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে জনসাধারণের মুক্তি, সংবিধান আমাদের যে অঙ্গীকার করেছে, এই প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ; সেই জনগণের মালিকানা এবং জনগণের মুক্তি, জনগণের মর্যাদা, সম্মান, সমতা এগুলো নিশ্চিত করবেন।

সংবাদচিত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিকে বর্ণনা করে বলা হয়েছে, ‘‘মেঘমেদুর বৃষ্টিভেজা দিন ছিল ১৯৮১ সালের ১৭ মে। প্রকৃতির বিরূপতাকে আমলে না নিয়ে লাখো জনতা সমবেত বিমানবন্দরে। বৃষ্টিতে ভিজে তারা অপেক্ষা করছেন কখন আসবেন তাদের প্রাণের নেত্রী। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ভারত থেকে বিমানে এসে ছয় বছর পর তিনি নামলেন পিতা-মাতা ভাইয়ের রক্তস্রোতে সিক্ত স্বদেশের মাটিতে। সে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। এক বুক কান্না নিয়ে তিনি স্বদেশে পা রাখলেন। হাজির হলেন জনতার সামনে। প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানো হলো বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে। তার এই ফিরে আসার মধ্য দিয়ে জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন ধারণা সৃষ্টি হলো যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণ তার সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাবে। তারা পাবে মুক্তি। হাজার হাজার নেতাকর্মীর চোখে ছিল আনন্দাশ্রু। অসামান্য যোগ্যতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা ঠাঁই করে নিলেন জনতার হৃদয়ের মণিকোঠায়। দেশে ফিরে মানিক মিয়া এভিনিউর জনসমুদ্রে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেখ হাসিনা উচ্চারণ করলেন,‘সব হারিয়ে আজ আমি এসেছি বাংলায়। এ দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে। আমার আজ হারানোর কিছুই নেই”।

তথ্যচিত্রের বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সালের ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলবিধির আওতায় আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়। দলে তখন নেতৃত্ব সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইডেন হোটেল প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাবজেক্ট কমিটিতে আলোচনা উঠল, সভাপতি নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা হলেও ঐক্যমত্য হলো না। এমনি এক ঘোর অমানিশার মধ্যে হঠাৎ করে আলোর রেখা দেখা গেল। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে নাম প্রস্তাব করা হলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। সেদিন সব কাউন্সিলর অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপ্রধানের নামটি জানার জন্য। সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনার না প্রস্তাব করা হলো। নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়লেন নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছিলেন অসহায় ও রিক্ত। শেখ হাসিনার নাম ঘোষণায় তারা যেন পূর্ণ হলেন। যেন পেলেন অভিভাবক। দল যেন আবার ফিরে পেল প্রাণচাঞ্চল্য।

বর্ণনায় বলা হয়, এ সম্মেলনে শেখ হাসিনা শুধু দলটির সভানেত্রীই হলেন না, ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করলেন উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটিকে। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতারা সভানেত্রীকে এ ব্যাপারে অবহিত করার জন্য দিল্লি যান এবং তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশে ফেরার কর্মসূচি ঠিক করেন।

এতে বলা হয়, ওরা আঘাত হেনেছে বারবার; সংবাদচিত্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলকে সুসংগঠিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও গণমানুষের দারিদ্র্যমুক্তির রাজপথে শুরু করে দুর্বার গণ-আন্দোলনের বিভিন্ন দিকের ছবি স্থান পেয়েছে। জিয়া-এরশাদের স্বৈরশাসন এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জামাত-রাজাকারদের তাণ্ডবে মানুষ ছিল তখন নির্যাতিত-নিষ্পেষিত, সেসময় প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলেন ছবিতে তা বর্ণিত হয়েছে।

ছবির গল্পে গল্পে বলা হয়েছে, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার অকুতোভয় নেতৃত্বে মানুষ ফিরে পায় তাদের হারানো মনোবল। শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমে আসে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। স্বৈরাচার, লুটেরা, যুদ্ধাপরাধীদের ভিত কেঁপে ওঠে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিপুল গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে। তা দমাতে না পেরে তারা গ্রহণ করে হত্যা ও সন্ত্রাসের তাদের সেই পুরনো কৌশল। একের পর এক হামলা করতে থাকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর। ২৩টি বড় ধরনের হামলা হয়েছে। কিন্তু পরম করুণামায় আল্লাহর অশেষ রহমতে ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রাণে বেঁচে গেছেন। তবে এসব হামলায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করেছেন অনেকে। তথ্যচিত্রে শুধু শেখ হাসিনার আন্দোলন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবির প্রতীকী নয়, ছবিতে ছবিতে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে অর্জন-সাফল্য-উন্নয়ন-স্বীকৃতির গল্পমালাও ঠাঁই পেয়েছে।

শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বাংলাদেশের অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে শৃঙ্খল মুক্ত করতে ছুটে বেড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা একজন সংগ্রামী নেতা থেকে এখন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ও উন্নয়নের নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনীতির রোল মডেল। আর উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে শেখ হাসিনার নাম চিরভাস্মর হয়ে থাকবে।